সোমবার ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫ - ১৮:৫৬
আয়াতুল্লাহ আরাফির পক্ষ থেকে নিরাপত্তা রক্ষাকারী বাহিনীর সংগ্রামী সদস্যদের প্রতি কৃতজ্ঞতা

আয়াতুল্লাহ আরাফির পক্ষ থেকে নিরাপত্তা রক্ষাকারী বাহিনীর সংগ্রামী সদস্যদের প্রতি কৃতজ্ঞতা

১৫০০ বছর পূর্তিতে মহানবী (সা.)-এর ব্যক্তিত্ব পুনরাবিষ্কারের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর

দেশের হাওজা ইলমিয়ার পরিচালক কুম প্রদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের সাথে সাক্ষাতে নিরাপত্তা সৃষ্টিকারী সবুজপোশ বাহিনীর প্রচেষ্টার প্রশংসা করে দেশের ধর্মীয় ও সামাজিক মূল্যবোধ রক্ষায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মৌলিক ভূমিকার ওপর জোর দেন।

হাওজা নিউজ এজেন্সি রিপোর্ট অনুযায়ী, আয়াতুল্লাহ আলী রেজা আরাফি, দেশের হাওজা ইলমিয়ার পরিচালক, কুম প্রদেশের পুলিশ প্রধানের সাথে সাক্ষাতে "আইনশৃঙ্খলা সপ্তাহ" উপলক্ষে শুভেচ্ছা জানিয়ে এ বাহিনীর সংগ্রামের প্রশংসা করেন এবং মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর জন্মের ১৫০০ বছর পূর্তি উপলক্ষে যথাযথ সম্মান প্রদর্শন, সাংস্কৃতিক ও সামাজিক মূল্যবোধ রক্ষা এবং বাহিনীর মানসিক দৃঢ়তা ও আধ্যাত্মিক সুস্থতার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন।

হাওজা ইলমিয়ার পরিচালক আরও বলেন: আমরা মহান ইমাম, ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ এবং বিশেষ করে নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষার শহীদ এবং শহীদ সাইয়্যেদ হাসান নাসরুল্লাহকে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করি এবং তাদের উজ্জ্বল আত্মার প্রতি সালাম জানাই। আমরা আশা করি আল্লাহ তাদের পরিবারকে ধৈর্য ও প্রশান্তি দান করবেন এবং আহতদের দ্রুত আরোগ্য দান করবেন।

১৫০০ বছর পূর্তিতে মহানবী (সা.)-এর ব্যক্তিত্ব পুনরাবিষ্কারের প্রয়োজনীয়তা

হাওজা ইলমিয়ার পরিচালক বলেন: মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর জন্মের ১৫০০ বছর পূর্তি সামনে। এই উপলক্ষে প্রত্যাশা করা হয় যে, সব প্রতিষ্ঠান ও সংস্থা নবী করিম (সা.)-এর ব্যক্তিত্ব পুনরায় উপস্থাপনের জন্য বিশেষ কর্মপর্ব শুরু করবে। এমন কার্যক্রম পরিকল্পনা করতে হবে যাতে সমাজে নবীর পরিচয় তুলে ধরার পাশাপাশি তাঁর প্রতি আমাদের ভালোবাসা ও জ্ঞান বৃদ্ধি পায়।

তিনি বলেন: আল্লাহর রাসূল সমগ্র সৃষ্টির শ্রেষ্ঠতম এবং সকল ঐশী গুণের কেন্দ্রবিন্দু। তিনি আল্লাহর সব নাম ও গুণের প্রতিফলন, তাই তাঁর মর্যাদা ও ব্যক্তিত্বের প্রতি বিশেষ দৃষ্টি দেওয়া উচিত। এ পথে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় কর্মসূচি আয়োজনের মাধ্যমে ভূমিকা রাখতে পারে।

আয়াতুল্লাহ আরাফি "لَقَدْ کانَ لَکُمْ فی‏ رَسُولِ اللَّهِ أُسْوَةٌ حَسَنَةٌ" আয়াতের ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন: এই আয়াত স্পষ্টভাবে নির্দেশ করে যে, রাসূলুল্লাহ (সা.) সমগ্র মানবজাতির জন্য পূর্ণাঙ্গ আদর্শ—ব্যক্তিগত জীবন, পারিবারিক সম্পর্ক, সামাজিক আচরণ, শান্তি ও যুদ্ধ—সবক্ষেত্রে তিনি নিখুঁত অনুসরণীয়।

তিনি আরও বলেন: তবে যারা আল্লাহ ও আখিরাতের আশা রাখে এবং জীবনে আল্লাহকে স্মরণ করে, তাদের জন্যই এ আদর্শ থেকে বেশি সুফল মেলে। কষ্ট-দুর্দশায় ধৈর্যধারণ ঈমানদারদের চরিত্রের গভীরতার প্রতিফলন, এবং ঈমানী সমাজকে এ ধরনের প্রতিরোধশক্তি দ্বারা সুসজ্জিত হতে হবে।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শক্তি ও দৃঢ়তার প্রশংসা

হাওজা ইলমিয়ার পরিচালক বলেন: দেশের নিরাপত্তা রক্ষায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ বাহিনী শক্তিশালী, সাহসী ও প্রশংসার যোগ্য। বিশেষভাবে সাম্প্রতিক ১২ দিনের যুদ্ধে আপনাদের সংগ্রাম ও প্রতিরোধের প্রশংসা করতে হয়; যেখানে জনগণ ও ঐশী মূল্যবোধ রক্ষায় আপনাদের দৃঢ়তা ও সাহসিকতা প্রকাশ পেয়েছে।

সামাজিক সমস্যার সমাধান-সব প্রতিষ্ঠানের যৌথ দায়িত্ব

আয়াতুল্লাহ আরাফি বলেন: সামাজিক সমস্যার দায় শুধু একটি প্রতিষ্ঠানের নয়; সাংস্কৃতিক, সামাজিক, নিরাপত্তা, বিচার বিভাগীয় প্রতিষ্ঠানসহ জনগণেরও দায়িত্ব রয়েছে। কুম শহরকে সামাজিক সমস্যার হ্রাসে অগ্রগামী হতে হবে, যাতে এটি সবচেয়ে কম সমস্যাপ্রবণ শহরে পরিণত হয়।

তিনি আরও বলেন: হিজাব ও সাংস্কৃতিক বিষয়ে উদাসীন হওয়া উচিত নয়। কুম এ বিষয়ে আলাদা মর্যাদা ধরে রাখবে। হযরত ফাতেমা মাসুমা (সা.)-এর পবিত্র হারাম এবং এ শহরের বৈজ্ঞানিক ও সাংস্কৃতিক মর্যাদা রক্ষা করা বড় দায়িত্ব। এজন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সাথে সহযোগিতা জরুরি, এবং এর ভিত্তি তৈরি করতে হবে বিদ্যালয়ে শিক্ষক ও প্রধান শিক্ষকদের মাধ্যমে।

আয়াতুল্লাহ আরাফি বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গির প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়ে বলেন: গবেষণানির্ভর প্রতিটি কাজ সফল হয়। শ্রোতাদের সঠিকভাবে চেনা এবং বুদ্ধি ও প্রজ্ঞার ভিত্তিতে কর্মসূচি প্রণয়ন কার্যক্রমকে গভীরতা দেয়। এ পথে বিনিয়োগ অপরিহার্য।

তিনি বলেন: আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের আধ্যাত্মিক ও নৈতিক সুস্থতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সৈনিক থেকে শুরু করে কমান্ডার পর্যন্ত সবার মানসিক, সামাজিক, রাজনৈতিক ও নৈতিক স্তর উন্নত হওয়া উচিত। এ দিকের যত্ন প্রযুক্তিগত দক্ষতার মতোই গুরুত্বপূর্ণ, কারণ বাহিনীর সুস্থতা সমাজের জন্য আশা সঞ্চার করে।

নিরস্ত্র প্রতিরক্ষা ও আধুনিক প্রযুক্তির প্রতি মনোযোগ

তিনি সাম্প্রতিক ১২ দিনের আরোপিত যুদ্ধে কিছু দুর্বলতার প্রসঙ্গ টেনে বলেন: উচ্চ সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও "নিরস্ত্র প্রতিরক্ষা" ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মতো উন্নত প্রযুক্তির ক্ষেত্রে আরও মনোযোগ প্রয়োজন। এ খাতে বড় পদক্ষেপ নেওয়া উচিত যাতে দুর্বলতাগুলো দূর হয়।

আয়াতুল্লাহ আরাফি বলেন: ইরান বিশ্বের একমাত্র জাতি যে জায়নিস্ট শাসনের বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থান নিয়েছে। বিদেশ সফরে, বিশেষত সাম্প্রতিক মালয়েশিয়া সফরে, আলেমদের পোশাককে বিশেষ সম্মান দেওয়া হয়েছে-যা ইরানি জাতির মহিমা, প্রজ্ঞাময় নেতৃত্ব ও দেশের শক্তিশালী সেনাবাহিনীর প্রতিফলন।

শেষে তিনি বলেন: বর্তমান অবস্থা বিশেষ ধরনের-একদিকে বড় সুযোগ, অন্যদিকে বড় হুমকি। এ অবস্থায় প্রতিরোধ, পুনর্গঠন এবং অগ্রগতির বাইরে আর কোনো পথ নেই, যেমনটি সর্বোচ্চ নেতা বলেছেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ইসলামী ব্যবস্থার প্রধান স্তম্ভ এবং দেশের আশা ও উদ্দীপনার চালিকাশক্তি, যা বাহিনীর প্রত্যেক সদস্যের মাঝে প্রতিফলিত হতে হবে।

সাক্ষাতের শুরুতে কুম প্রদেশের পুলিশ প্রধান জেনারেল মীরহিদারি কর্মকাণ্ড ও কার্যক্রমের একটি প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন।

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha